ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা | হাদিস ও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

বর্তমানে পোষ্য প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল অন্যতম। বিড়াল একটি পবিত্র প্রাণী এবং ইসলামে এটি পোষা জায়েজ। বিড়াল পোষার অনেক উপকারিতা রয়েছে বিড়াল পোষার উপকারিতা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে আসুন জেনে নি।
ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা
ইসলাম শান্তির ধর্ম ইসলামে সকল পশু পাখির উপর দয়া প্রদর্শন করার কথা বলা হয়েছে। আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সকল পশুপাখির উপর দেয়া প্রদর্শন করতেন। অন্যান্য পোষা প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল একটি পরিচ্ছন্ন প্রাণী হাদিসে এসেছে বিড়াল নাপাক নয় তাই এটি পোষা জায়েজ আজকে আমরা জানবো ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা, বিড়াল পালন সম্পর্কিত হাদিস , ইসলাম ও পশুপাখির প্রতি দয়া 

পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিড়াল

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ“বিড়াল অপবিত্র নয়। তারা তোমাদের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত।”(আবু দাউদ, তিরমিজি) এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় বিড়াল পবিত্র প্রাণী এবং বিড়াল ঘরে রাখলে তা নাপাক হয় না। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেনঃ“যে কোনো জীবন্ত প্রাণীর প্রতি দয়া করলে তাতে সওয়াব রয়েছে।” সর্বোপরি বলা যায় ইসলামে বিড়াল পোষা জায়েজ ও বৈধ এবং ইসলামে বিড়াল পোষার উপকারিতা অনেক সুতরাং আমরা তাদের অবহেলা করব না তাদের কষ্ট দিব না। আমরা তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবো যার ফলস্বরূপ আমরা সওয়াব অর্জন করতে পারব।

বিড়ালের প্রতি আবু হুরাইরা (রা.) এর ভালোবাসা

বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রা.) বিড়াল কে এত ভালোবাসতেন যে তার নাম রাখা হয় আবু হুরাইরা।হুরাইরা” একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হলো ছোট বিড়ালছানা।একদিন সাহাবীরা দেখলেন আবু হুরাইরা (রা.) তার জামাড় পকেটে একটি ছোট বিড়াল ছানা রেখেছেন এবং তাকে অনেক স্নেহ ও আদর করছেন। এই দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার রাম রাখেন “আবু হুরাইরা” যার অর্থ“বিড়ালের বাবা”।তিনি বিড়াল ছানাটিকে জামার ভাজে,রুমালে রেখে আদর করতেন স্নেহ করতেন এবং ভালবাসতেন যার ফলে তিনি অনেক সওয়াব অর্জন করতেন। একজন সাহাবীর নাম পর্যন্ত ইতিহাসে অমর হয়ে গেছে একটি ছোট বিড়ালের প্রতি তার ভালোবাসার কারণে।আবু হুরাইরা (রা.) এর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় শুধু মানুষের জন্য নয় আল্লাহর সৃষ্টি সকল প্রাণীর উপর সমান দয়া,স্নেহ,ভালোবাসা এবং সহানুভূতি দেখাতে।

বিড়াল পালনের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী বৃদ্ধি 

ইসলামে বিড়ালের পালনের উপকারিতার মধ্যে একটি বড় উপকারিতা হলো এটি মানুষের মানবিক গুণাবলী বৃদ্ধি করে। বিড়াল পালনের মাধ্যমে মানুষ হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে পাশাপাশি এটি মানুষের ডিপ্রেশন দূর করতে খুবই সাহায্য করে। বিড়ালকে আল্লাহ এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যেন বিড়ালের দিকে তাকালেই আমাদের মনের সকল হতাশা দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায় এবং প্রশান্তি বয়ে আনে। বিড়াল পালনের ফলে বিড়ালের প্রতি মানুষের এক ধরনের মায়া,ভালবাসা জন্মায়।নিজের পোষা বিড়ালের কিছু হলে তা তাকে গভীরভাবে চিন্তিত করে ও ব্যথিত করে।বিড়াল পালনের মধ্যে দিয়ে মানুষ প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা উপলব্ধি করে একই সাথে তা তাকে অন্যান্য প্রাণীদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে শেখায়।

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বিড়ালের উপকারিতা

বিড়াল পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিড়াল ইঁদুর, পোকামাকড় ইত্যাদি খেয়ে থাকে ফলে ঘর-বাড়ি, গুদাম, ধান বা চালের ভাঁড়া ইঁদুর ও পোকামাকড়মুক্ত থাকে। এছাড়াও বিড়াল পরিবেশে বিভিন্ন খাবার দাবার খেয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ করে। বিড়াল স্বভাবতই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে ভালোবাসে তারা প্রতিনিয়ত তাদের গা চেটে নিজেদের পরিষ্কার রাখে।ফলে আবর্জনা দুর্গন্ধ তারা সহ্য করতে চায় না।

বিড়াল পোষার মাধ্যমে সওয়াব অর্জন 

বিড়াল পালনের মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করা ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “এক নারীকে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হলো একটি বিড়ালের কারণে। সে বিড়ালটিকে বন্দি করে রেখেছিল। না তাকে খাবার দিয়েছিল, না ছেড়ে দিয়েছিল যাতে জমিনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বাঁচতে পারে। এর ফলে বিড়ালটি মারা যায়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩১৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১৯) সুতরাং এই হাদিস থেকে বোঝা যায় প্রাণীর প্রতি অবিচার করার ফলে এই মহিলাটি জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। আমরা প্রাণীর প্রতি কখনো অবিচার করব না। আমরা বিভিন্ন ক্ষুদার্থ প্রাণী তথা বিড়ালকে খেতে দিব প্রচন্ড গরমে তাদের জন্য পানি ব্যবস্থা করব।  তাদের প্রতি এরকম দেয়া প্রদর্শনের ফলে আমরা অনেক  সওয়াব অর্জন করার পাশাপাশি এর ফলস্বরূপ আমরা পরকালে পুরস্কৃত হবো।

আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সম্মান

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত। সুতরাং সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে অন্যান্য সকল জীবের উপর দয়া প্রদর্শন করা  মানুষের নৈতিক কর্তব্য আল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য জীবদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার কথা বলেছেন। ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতার মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা। আমরা বিড়াল পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে পারি।

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে বিড়ালের উপস্থিতি মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে পাশাপাশি  হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। যদিও ইসলাম সরাসরি বিজ্ঞানভিত্তিক এই দিকটি উল্লেখ করেনি, তবে বিড়াল পালন যে মানুষের উপকারে আসে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে  থেকে বিড়াল পালানোর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।

সামাজিক উপকারিতা 

যখন একজন মুসলিম বিড়ালকে ভালোবাসে ও যত্ন নেয়, তখন সে আশেপাশের মানুষকে একটি দৃষ্টান্ত দেয়। এর ফলে সমাজে ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। সকলের প্রাণীর প্রতি দয়া, মমতা,স্নেহ প্রদর্শন করে।

আমার মতামত 

সর্বোপরি ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না৷ ইসলামে বিড়াল পালনের  উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  উপরে আলোচনা করা হলো। আমার মতে আমাদের সকলের  বিড়াল পালন করা উচিত কারণ বিড়াল পালন করার মাধ্যমে আমরা সকল প্রাণীর প্রতি দয়া মমতা সহানুভূতি স্নেহ ইত্যাদি দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারব। মানবিক গুণাবলী অর্জন সহ স্বাস্থ্যগত উপকারিতা,সামাজিক উপকারিতা, আল্লাহর সৃষ্টির  প্রতি সম্মান, পরিবেশগত দিক ইত্যাদি বিষয় উপলব্ধি করতে পারবো। তাই আমাদের সকলের উচিত একবার হলে বিড়াল পালন করা। কারণ ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা অপরিসীম।

আশা করি আপনাদের পোস্টটি পড়ে ভালো লেগেছে ভালো লাগে মন্তব্য করুন বাটনে ক্লিক করে আপনার মতামত জানিয়ে যাবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ক্রিয়েটিভ ইনফো ৩৬০ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url