কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি এ বিষয়ে অবশ্যই আমার ধারণা থাকতে হবে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা মানে এটি একটি গুরুতর অবস্থা তাই এই সময় ভুল পদক্ষেপ নিলে হতে পারে মৃত্যু ঝুঁকি। এখন প্রায়ই আমাদের ঘরে ঘরে জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে নানা ধরনের জ্বরের প্রভাব দেখা দিচ্ছে।যেমনঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা, ভাইরাস জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর এবং ম্যালেরিয়া বা চিকুনগুনিয়া জনিত জ্বর। এইসব জ্বরের ক্ষেত্রে লক্ষণ এবং করণীয় উভয়ই আলাদা। তাই চলুন জেনে নেই গুরুতর অবস্থা অর্থাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি
- কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি
- যেসব কারণে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে
- ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ভাইরাসজনিত যেমন ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া ইত্যাদি জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ব্যাকটেরিয়াজনিত যেমন টাইফয়েড নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
-
যে পর্যায়ে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত
- এই সময় যে কাজ গুলো করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে
-
যে কোন ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে প্রাথমিক করণীয় কি
-
কিভাবে এসব জ্বর থেকে আমরা নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারি
- শেষ কথাঃ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি এই বিষয়ে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট কোন ধারণা
নেই অনেকেই আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি এবং ভুলভাল সিদ্ধান্ত নি। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর
আসা মূলত একটি গুরুতর অবস্থা। আমাদের শরীর সাধারণত নানা ব্যাকটেরিয়া বা
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এসব ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশের ফলে নানা
সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় এদের প্রভাব বেড়ে গেলে শরীরে
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। ভাইরাস জনিত জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু বা
চিকুনগুনিয়া জনিত জ্বরের ক্ষেত্রেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে এবং জ্বরের
সাথে আরো নানা রকম লক্ষণ থাকতে পারে।
তাই আমাদের কোন জ্বরের ক্ষেত্রে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত তা আগে বুঝতে হবে।
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা যেহেতু একটি গুরুতর পরিস্থিতি তাই এই সময় আমাদের
করণীয় কি তা সঠিকভাবে জানা খুবই জরুরী। তাই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয়
কি। এ বিষয়ে প্রথমে আমাদের পদক্ষেপ হবে রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দেওয়া।
এ অবস্থায় রোগীকে দিয়ে কোন কাজ করানো যাবে না। জ্বর আসলে অনেক সময় শরীরে
পানি শূন্যতা হয় তাই এই সময় ঘনঘন পানি খাওয়ালে শরীরে পানি শূন্যতা রোধ
হয়।
এ সময় হালকা গরম পানি দিয়ে রোগীর গা মুছে দিলে জ্বরের তীব্রতা বা
কাঁপুনি কিছুটা কমে। জ্বর হওয়ার পরে অনেক সময় রোগীর খাওয়ার অরুচি হয় বা
কিছু খেতে ইচ্ছা করে না কিন্তু এই সময় কিছু না খেলে রোগী আরো দুর্বল হয়ে
পড়বে এবং জ্বর সারতে আরো বেশি সময় লাগবে। তাই এই সময় অবশ্যই রোগীকে পর্যাপ্ত
খাবার খেতে হবে যেমন গরম সুপ, খিচুড়ি বা বিভিন্ন ফলের জুস। পাশাপাশি নিয়মিত ৬
ঘন্টা পর পর প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। জ্বরের সাথে যদি অন্য সমস্যা যেমন
শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়রিয়া জনিত সমস্যা দেখা যায়। তবে অবশ্যই
চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে। নিচের পয়েন্ট গুলোতে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
যেসব কারণে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার পিছনে নানা কারণ রয়েছে। মূলত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া
আক্রান্ত হওয়ার ফলে আমরা জ্বরে আক্রান্ত হই। উপরের পেড়াতে এ বিষয়ে হালকা
আলোচনা করা হলেও এখন আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানবো। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফ্লু
বা করোনার মত ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে ভাইরাসের প্রভাবের কারণে আমাদের
শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
ভাইরাসজনিত জ্বরের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেও আমাদের শরীরে তীব্র
জ্বর আসতে পারে শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের ফলে টাইফয়েড,
নিউমোনিয়া বিভিন্ন ইনফেকশন, টনসিলসহ নানা রোগ সৃষ্টি হয়। এসব রোগের কারণেও
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। এছাড়া মশা বাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত
হওয়ার ফলক আপনাদের দিয়ে জ্বর আসতে পারে। আবার কিছু রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা
প্রদাহজনিত রোগের কারণেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার লক্ষণ দেখা যায়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
আমরা প্রায় সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হই। ইনফ্লুয়েঞ্জা
বা ফ্লু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ফলে সাধারণত যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়
সেগুলো হলো জ্বর, মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া,শুকনো কাশি, গলা বা পুরা
শরীর ব্যথা করা ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া অনেক সময় হাঁচি
কাশি, খাওয়ার প্রতি অরুচি ভাব বা ক্ষুধামন্দাও দেখা দেয়। জ্বরের
প্রভাব বেশি হলে অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। শিশু ও বয়স্কদের
ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও হতে পারে।
তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু জ্বরে আক্রান্ত হলে আমাদের
কিছু করণীয় আছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু জ্বরে আক্রান্ত হলে
আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি গরম স্যুপ, ডিম সিদ্ধ, ফলের জুস ইত্যাদি শরীরে
শক্তি যোগাই এবং শরীর হাইড্রেট থাকে। এর পাশাপাশি ছয় ঘন্টা পর
পর প্যারাসিটামল খেতে হবে এবং জ্বর খুব বেশি থাকলে জলপট্টি দেওয়ার
ব্যবস্থা করতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু জ্বর তুলনামূলক সাধারণ হলেও
পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাইরে গেলে
অবশ্যই মাক্স পড়ার অভ্যাস করতে হবে তাহলে আশা করা যায় এ ধরনের
সংক্রমণ থেকে আমরা সুরক্ষিত করে থাকবো।
ভাইরাসজনিত যেমন ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া ইত্যাদি জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
ভাইরাস জনিত জ্বর যেমন ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া মূলত মশা বাহিত রোগ এবং
মশার মাধ্যমে এগুলো ছড়ায়। ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া হলে হঠাৎ শরীরে
তীব্র জ্বর আসে, মাথা ও চোখের পিছনে প্রচন্ড ব্যথা হয় পাশাপাশি শরীরের
বিভিন্ন জয়েন্টে প্রচন্ড ব্যথা, বমি বমি ভাব পাওয়া অথবা বমি হওয়া
এমনকি ত্বক লালচে হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। তবে গুরুতর
অবস্থা সৃষ্টি হলে রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়ার মতো ভাইরাস যেহেতু মশার মাধ্যমে
ছড়ায় সুতরাং আমাদের প্রথম করণীয় হবে এইসব মশা থেকে নিজেদেরকে সাবধানে
থাকা। বর্ষাকালে বাসার অনেক জায়গায় বর্ষার পানি জমে থাকে এবং সেই জমা
পানিতে এডিস মশা বিস্তার লাভ করে। তাই আমাদের উচিত বাসা বা বাসার
আশেপাশে যেমন ফুলের টবে বা পানি জমে থাকতে পারে এমন কিছুতে পানি জমতে
না দেওয়া এবং পানি জমে থাকলে তা ফেলে দেওয়া। এর পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর সময়
মশারে টাঙ্গিয়ে ঘুমানো উচিত। ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া হলে পর্যাপ্ত সুষম
খাদ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি। নিজে নিজে কোন ওষুধ সেবন না করে ডাক্তারের
পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খাওয়া উচিত। অবস্থা গুরুতর হলে অবশ্যই
হাসপাতালে ভর্তি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
ব্যাকটেরিয়াজনিত যেমন টাইফয়েড ও নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ হিসেবে টাইফয়েড বা নিউমোনিয়া পরিচিত।টাইফয়েড এবং
নিউমোনিয়া উভয়ের লক্ষণে রয়েছে কিছুটা বিভিন্নতা। উভয় রোগে কাঁপুনি
দিয়ে জ্বর আসার মতো মারাত্ম অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই কোন রোগের কি লক্ষণ তা
নিয়ে নিচে পয়েন্ট আকারে দেয়া হলোঃ
- টাইফয়েড কেন হয় লক্ষণ ও প্রতিকারঃ Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশের ফলে আমরা টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। দূষিত পানি বা খাবার খেলে এবং সব সময় অপরিষ্কার থাকলে এ ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীর প্রবেশ করে। টাইফয়েড হলে দীর্ঘজ্বর, মাথাব্যথা, শরীর দুর্বল, ক্ষুধামন্দা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা যায়। টাইফয়েড হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ সম্পূর্ণ করতে হয় এবং প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হয় এছাড়া নিজেকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়।
- নিউমোনিয়া কেন হয় লক্ষণ ও প্রতিকারঃ নিউমোনিয়া মূলত Streptococcus pneumoniae নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। ধূমপান করলে, দূষিত পরিবেশে বসবাস করলে বসবাস করলে বা বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থের গুড়া ফুসফুসে প্রবেশ করলে এ রোগ হয়ে থাকে। এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস বা অ্যাজমা আছে তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে তীব্র জ্বর, শীত শীত ভাব, শ্বাসকষ্টের সাথে বুকে ব্যথা এবং শ্বাস নেওয়ার সময় ঘর ঘর শব্দ হয়। কাশি হয় এবং অনেক সময় কফের সাথে রক্ত বেরিয়ে আসে এছাড়া ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়ার মত উপসর্গ দেখা যায়। নিউমোনিয়া হলে অবশ্যই আমাদের যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার যে ওষুধ লিখে দিবে তা নিয়ম মেনে খেতে হবে। এই অবস্থায় রোগীকে পর্যাপ্ত তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো জরুরি।
যে পর্যায়ে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা সাধারণত কারণ হলেও কিছু সময় এটি গুরুতর কোন রোগের লক্ষণ
হতে পারে। ঘরে বসে শুধু বিশ্রাম, পানি পান করা বা ঘরোয়াভাবে নেওয়া চিকিৎসা
অনেক সময় যথেষ্ট নয়। যদি জ্বর ১০১°F বা তার বেশি হয় এবং ২ থেকে ৩ দিনের
মধ্যে না কমে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া
জ্বরের সাথে যদি তীব্র মাথাব্যথা, কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবংঘন ঘন বমি বা
ডায়রিয়া হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে কাঁপুনি সহ জ্বর হলে মটেই তা অবহেলা
করা উচিত নয়। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত কম হয়। আবার ডেঙ্গু,
ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড বা নিউমোনিয়ার মতো রোগের সন্দেহ হলে দ্রুত টেস্ট করে
চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে না গেলে জটিলতা বাড়তে পারে।
এই সময় যে কাজ গুলো করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে আমাদের অবশ্যই কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে নাহলে
শরীরের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। প্রথমত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল বা বরফ
ব্যবহার করা উচিত না কারণ এতে শরীরে হঠাৎ ঠান্ডা লেগে আরও কাঁপুনি বেড়ে যেতে
পারে। দ্বিতীয়ত অতিরিক্ত ভারী খাবার, ভাজা পোড়া ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া না
খেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।তৃতীয়ত এ জ্বরের সময়
অযথা ওষুধ সেবন বিশেষ করে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়া একেবারেই উচিত না। যেকোনো ধরনের ওষুধ সেবনের
আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই সময় শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। অতিরিক্ত কাজ করা ঠিক না। আবার
আমাদের মধ্যে অনেকেই মারাত্মক একটি ভুল কাজ করে
তা হলো ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ভন্ড কবিরাজ এর কাছে
যাওয়া। এতে রোগীর উপকারের তুলনায় অপকার হয় বেশি কারণ ভন্ড
কবিরাজরা রোগ সারানোর জন্য উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড দিয়ে থাকে। যা
পরবর্তীতে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ কিছু রোগ ডেকে আনে।
যে কোন ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে প্রাথমিক করণীয় কি
আমাদের প্রায় সবারই জ্বর আসে এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে প্রাথমিক
করণীয় কি তা আমাদের সকলের জানা উচিত। যে কোন ধরনের জ্বরের
ক্ষেত্রেই আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
হবে। এক্ষেত্রে প্রথমত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। এই
সময় শরীর দুর্বল থাকায় কোন ধরনের কাজ করা যাবে
না। দ্বিতীয়ত যথাসম্ভব পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করতে
হবে যেমন গরম স্যুপ, খিচুড়ি, ফলের জুস প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে
হবে। পাশাপাশি কছি ডাভের পানি, লেবুর শরবত বা নারকেলের পানি খেলে শরীরে
পানিশূন্যতা কমে।
আবার কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রোগীর সারা শরীর মুছে
দিলে জ্বরের তীব্রতা বা কাঁপুনি কিছুটা কমে। জ্বরের সময় সহজে হজম
হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত। যদি জ্বর ১০১°F এর বেশি হয় এবং টানা ২ থেকে ৩ দিন
স্থায়ী থাকে এবং অন্য গুরুতর উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি,
ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দেয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে। তবে সাধারণ জ্বর হলে এবং প্রাথমিক ভাবে এইসব পদক্ষেপ
নিলে সাধারণত রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।
কিভাবে এসব জ্বর থেকে আমরা নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারি
জ্বর সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হয়ে
থাকে। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকলে এসব জ্বর থেকে নিজেকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা
সম্ভব। প্রথমত, আমাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকা জরুরি। নিয়মিত হাত ধোয়া,
খাবার ঢেকে রাখা এবং বিশুদ্ধ পানি পান করলে যেকোনো রোগের ঝুঁকি কমে।
দ্বিতীয়ত, মশা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে, কারণ ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো
জ্বর মশার কামড় থেকেই ছড়ায়। মশারি ব্যবহার করা, বাসার আশেপাশে জমে
থাকা পানি পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয়ত, সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা দরকার, যাতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি পাই যেকোনো রোগ সহজে মোকাবেলা করা যায়। চতুর্থত, ঋতু পরিবর্তনের
সময় হঠাৎ ঠান্ডা বা গরমে না যাওয়া। এছাড়া ভিড় এড়িয়ে চলা, মাক্স
ব্যবহার করা, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং
পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও শরীরকে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে। এসব সতর্কতা মেনে চললে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে
আসে
শেষ কথাঃ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে করণীয় কি এ বিষয়ে আমরা উপরে এতক্ষন নানা আলোচনা
করলাম।কাঁপুনি দিয়ে জ্বর অনেক সময় সাধারণ কারণেও যেমন হতে পারে তেমনি
হতে পারে গুরুতর কোন রোগের লক্ষণ। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে আতঙ্কিত না হয়ে
আমাদের করণীয় কি তা আগে জানা প্রয়োজন। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার
খাওয়া, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ, শরীর পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনে শরীর
মুছে দিয়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা উচিত। শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের
ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর যদি কয়েকদিন ধরে থাকে এবং
শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয় তবে দ্রুত সম্ভব
চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
আমার মতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বরকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। অনেকেই সাধারণ জ্বর
ভেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না ফলে পরবর্তীতে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়।
আমরা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি কি করতে হবে এবং কি
করা থেকে বিরত থাকে সেই বিষয় অবগত থাকি থাহলে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি
রোধ করা সম্ভব। তবে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর বা তীব্র লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা
করে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যদি সচেতন থাকি তবে কাঁপুনি
দিয়ে জ্বর আসলে বড় যেকোনো ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।



ক্রিয়েটিভ ইনফো ৩৬০ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url